নিজস্ব প্রতিবেদক /ক্রাইম ওয়াচ
ব্রাসেলসে বাংলাদেশ দূতাবাস বিদেশী বন্ধু ও বাংলাদেশ কম্যুনিটির অংশগ্রহণে ০৩ মে তারিখে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২৩ এর অভ্যর্থনা অনুষ্ঠান আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, এম.পি., বেলজিয়াম সরকারের পক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (দ্বিপাক্ষিক বিষয়াবলী) রাষ্ট্রদূত জেরোএন কুরম্যান এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পক্ষে ইউরোপিয়ান এক্সটার্নাল এ্যাকশন সার্ভিস-এর রাজনৈতিক বিষয়াবলী সংক্রান্ত ডেপুটি সেক্রেটারী জেনারেল এনরিকে মোরা। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সদস্য নাহিম রাজ্জাক, এম.পি. অংশগ্রহণ করেন।
ডেপুটি সেক্রেটারী জেনারেল এনরিকে মোরা বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ বাংলাদেশ প্রত্যাশার চেয়েও অনেক বেশি অর্জনের মাধ্যমে বর্তমানে একটি শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ ও আঞ্চলিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ অত্যন্ত উদারতার সঙ্গে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার এক মিলিয়নের বেশি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রদানে ধন্যবাদ জানিয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বিষয়টিও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের ৫২তম বার্ষিকীতে ‘সোনার বাংলা’র সবাইকে অভিনন্দন জানান। এ বছর বাংলাদেশ ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আনুষ্ঠানিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে তিনি বলেন, ৫০ বছর আগে যে সম্পর্ক অর্থনৈতিক সাহায্য দিয়ে শুরু হয়েছিল তা আজ শক্তিশালী অংশীদারিত্বে (পার্টনারশীপ) রূপান্তরিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মধ্যে ২০২২ সালে ঢাকায় প্রথম রাজনৈতিক সংলাপ (পলিটিক্যাল কন্সালটেশনস) অনুষ্ঠিত হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
রাষ্ট্রদূত জেরোএন কুরম্যান মুক্তিযুদ্ধের অব্যবহিত পরেই বাংলাদেশকে স্বীকৃতির বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, বেলজিয়াম ও বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের প্রেক্ষিতে ০৪ মে ২০২৩ তারিখে প্রথমবারের মতো দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ‘দ্বিপাক্ষিক কন্সালটেশনস’ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ২০২২ সালে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক উদযাপন, বেলজিয়ামের মহামহিম রাণীর সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফর ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করতে বাংলাদেশ ও বেলজিয়াম ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, এম.পি. তাঁর বক্তব্যে সকলকে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, গত বছর বাংলাদেশ ও বেলজিয়াম এবং এ বছর বাংলাদেশ ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি আজকের অনুষ্ঠানকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে। বাংলাদেশ ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ৫ দশকের সম্পর্কের অগ্রযাত্রায় অর্থনৈতিক সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বর্তমানে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ-নির্ভর সম্পর্কে পরিণত হয়েছে। এক্ষেত্রে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ‘এভরিথিং বাট আর্মস’ স্কিম বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে উল্লেখ করে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে ধন্যবাদ জানান। বেলজিয়াম ও বাংলাদেশের অগ্রসরমান সম্পর্ক ‘দ্বিপাক্ষিক কন্সালটেশনস’-এর মাধ্যমে আরো সংহত হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে বেলজিয়াম ও লুক্সেমবার্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে মিশন প্রধান মাহবুব হাসান সালেহ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী রাষ্ট্র, সরকার ও বন্ধুদের অবদান কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও বেলজিয়ামের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ধারা অব্যাহত থাকবে। রাষ্ট্রদূত সালেহ আরো বলেন, বাংলাদেশ ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মধ্যকার পরিণত ও ক্রমবর্ধামন অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ যখন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হচ্ছে সেই ঐতিহাসিক সময়ে রাষ্ট্রদূত এবং মিশন প্রধান হিসেবে বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে দায়িত্ব পালন করা তাঁর জন্য বিরল সম্মান ও গৌরবের বলে তিনি উল্লেখ করেন।
রাষ্ট্রদূত মাহবুব হাসান সালেহ মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীরতম শ্রদ্ধা নিবেদন করে অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিগণকে বাংলাদেশের জাতীয় শ্লোগান ‘জয় বাংলা’ উচ্চারণের অনুরোধ জানান। এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের দুই শতাধিক অতিথিসহ উপস্থিত তিন শতাধিক অতিথিগণের স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহণে তিনবার ‘জয় বাংলা’শ্লোগানে মুখরিত হয় ব্রাসেলসের ঐতিহ্যবাহী সের্কেল রয়্যাল গেলুয়া সেন্টারটি।
এরপর মো. শাহরিয়ার আলম, এম.পি., জেরোএন কুরম্যান, এনরিকে মোরা, নাহিম রাজ্জাক, এম.পি. এবং মাহবুব হাসান সালেহ কেক কেটে অতিথিগণের সঙ্গে বাংলাদেশ ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করেন। এছাড়া, ৩৭ বছর যাবত বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত বেলজিয়ামের নাগরিক ও দূতাবাসের প্রবীণতম সদস্য মিজ্ সুজান পটিয়েখের হাতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, এম.পি. বিশেষ সম্মাননা তুলে দেন। অনুষ্ঠানে আগত অতিথিগণকে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী কাচ্চি বিরিয়ানীসহ উপাদেয় খাবার ও মিস্টি পরিবেশনের মাধ্যমে আপ্যায়ন করা হয়, যা বিদেশী ও দেশী সকলে উপভোগ করেন।
অনুষ্ঠানে বেলজিয়াম পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাগণ, রাষ্ট্রদূত/ কূটনীতিকগণ, ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সদস্যগণ, বেলজিয়ামের রাজনীতিকবৃন্দ, গণমাধ্যম, থিংক ট্যাঙ্কস, একাডেমিয়া, ব্রাসেলসভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিসহ বেলজিয়াম ও লুক্সেমবার্গে বসবাসরত বাংলাদেশ কম্যুনিটির সদস্যগণ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।
Leave a Reply